জহিরুল ইসলাম খান: মাদারীপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের স্থায়ী ক্যাম্প ছিল জেলা শহর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নে। ১৯৭১ সালের ২৯ অক্টোবর, বাংলা ১৪ কার্তিক রাতে মুক্তিযোদ্ধারা ঘটকচর রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণে যায়। এই সুযোগে ১৫ কার্তিক খুব ভোরেই পাক বাহিনী আক্রমণ চালায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত ৪টি গ্রামে। রাজাকারদের সহযোগিতায় প্রায় দুই শতাধিক ঘর-বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে এবং নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে ৬৬ জন নর-নারীকে। ১৯৭১ সালের ৩০ অক্টোবর, বাংলা ১৫ কার্তিক মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের বাহাদুরপুর, চৌহদ্দী, উত্তর কলাগাছিয়া ও পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রাম পরিণত হয়েছিল মৃত্যুপুরীতে। সেদিন বাহাদুরপুরে শিকারী বাড়িতে ২৯ জন, উত্তর কলাগাছিয়ার কেষ্টবৈদ্যর বাড়িতে ১৫ জন, চৌহদ্দি হাটখোলায় ১২ জন ও পূর্ব কলাগাছিয়ার সুষেণ হালদারের বাড়িতে ১০ জন মোট ৬৬ জন বাঙালিকে হত্যা করে পাকবাহিনী। কেন্দুয়া ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামের শিকারী বাড়ির ১৪ জন বাসিন্দাসহ একই স্থানে দাড় করিয়ে হত্যা করা হয় ২৪ জনকে। শিকারী বাড়িতে মোট ২৯ জনকে হত্যা করে পাকবাহিনী ও রাজাকাররা।
পাকবাহিনী ও রাজাকাররা পূর্ব কলাগাছিয়া গ্রামের ৫০ থেকে ৬০টি ঘরে অগ্নিসংযোগ করে। নিয়ে যায় গবাদিপশু ও ক্ষেতের ফসল। স্বামী-সন্তান হারিয়ে কেঁদে ফেরে অনেক নারী। চৌহদ্দি ও উত্তর-কলাগাছিয়া গ্রামেও চলে হত্যা, লুটপাট এমনকি ঘরের মধ্যে আটকে অগ্নি-সংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। উত্তর কলাগাছিয়ার কেষ্টবৈদ্যর বাড়িতে ১৫ জন, চৌহদ্দি হাটখোলায় গুলি করে হত্যা করা হয় ১২ জনকে। মাদারীপুরের মুক্তিযুদ্ধকালীন কমান্ডার খলিলুর রহমান খান বলেন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক থেকে ৬ কিলোমিটার ভেতরে কেন্দুয়া ইউনিয়নের ৪টি গ্রামের ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধারা গেরিলা আক্রমণ চালাতেন। প্রতিশোধ নিতেই এই বর্বরোচিত হামলা করে পাকবাহিনী। মুক্তিযুদ্ধে এই এলাকার মানুষের অবদান বলে শেষ করতে পারবো না।
মাদারীপুরের মুক্তিযোদ্ধা নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের জানান, বাঙালী মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে পাকবাহিনী যে আত্মসমর্পন করেছে তা শুধুমাত্র মাদারীপুরের খলিল বাহিনীর হাতেই। এটি ইতিহাসেরও একটি অংশ ও মাদারীপুরবাসীর গর্বের বিষয়। এই ৪টি গ্রাম ছাড়াও এদিন পাশের রাজৈর উপজেলার পাখুল্যা গ্রামে হত্যা করা হয়েছিল অনেক মানুষকে। পাকবাহিনীর সাথে রাজাকারা সরাসরি লুটতরাজ ও হত্যাযজ্ঞে অংশ নিয়েছিল। তাই এই ৪টি গ্রামের সব মানুষের দাবী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার।
মুক্তিযুদ্ধে এত অবদান যাদের সেই এলাকার মানুষ আজও অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবেই রয়েছে। সরকারি সহযোগিতাতো দূরের কথা তারা পাননি কেউ কোন স্বীকৃতি। সেদিনের গণহত্যায় যারা প্রাণ হারিয়েছিলেন তাদের নাম কোথাও লিপিবদ্ধ হয়নি, এমনকি আজ পর্যন্ত তাদের কথা প্রকাশিত হয়নি কোথাও। দৈনিক বিশ্লেষণ ও মাদারীপুর ২৪ ডটকম-এর পক্ষ থেকে সেই দিনের শহীদদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হলো:
ধন্যবাদ সাংবাদিক জহিরুল ইসলাম খানকে। “ইতিহাস সৃস্টিকারী বিজয় এসেছিরেী যে মানুষদের অবদানে” শিরোনামে অনলাইন পোর্টাল নিউজের জন্য। আরও একটা বিষয় উল্লেখ্য যে, ইতিহাস সৃস্টিকারী দলের মধ্যে আমার বাবাও একজন। সরকারের কোনও জায়গায় স্থান না পেলেও একজন প্রফেশনাল সাংবাদিকের কলমে আর ক্যামেরায় স্থান পেয়েছে এজন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
sheikh israfil
১৩-১১-২০১৬ at ১২:১৬ অপরাহ্ণ