জহিরুল ইসলাম খান: পুরো জেলায় পোস্টারিং করা হয়েছে ‘জেলা পরিষদের আয়োজনে মিলন মেলা’। এতে সাংস্কৃতিক আকর্ষণ হিসেবে ছবি দেয়া আছে কয়েকজন শিল্পীর। আর রাজনৈতিক আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে বর্তমান মন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী, জেলার ৩টি সংসদীয় আসনের নির্বাচিত এমপি, সংরক্ষিত মহিলা এমপি ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারীসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ। আর সবার চেয়ে আলাদা হিসেবে নিজেকে জাহির করেছেন জেলা পরিষদের প্রশাসক। কারণে ভিভিআইপি ও ভিআইপিদের এই মিলনমেলায় তিনি সভাপতি। দাওয়াতপত্র ছাপা হয়েছে, বিলি হয়েছে জেলাব্যাপী। অনুষ্ঠানের আয়োজনে যেহেতু জেলা পরিষদ সেহেতু এসব কিছুর খরচ জেলা পরিষদের তহবিল থেকেই ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষের কাছ থেকে প্রশ্ন উঠেছে, একটি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনির্বাচিত প্রশাসক হিসেবে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের তহবিলের টাকায় আওয়ামী লীগ দলীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের এমন মিলন মেলার আয়োজন করতে পারেন কি না?
আরেকটি বিষয়েও কালকিনির বাইরের মানুষ বিশেষ করে জেলা সদরের মানুষ উষ্মা প্রকাশ করেছে তা হলো, পুরো জেলার এই রাজনৈতিক মিলন মেলা কেন জেলা সদরে না হয়ে কালকিনিতে হবে। জেলা পরিষদের প্রশাসকের বাড়ি কালকিনিতে, তাই তিনি জেলার মিলনমেলা করবেন গিয়ে কালকিনিতে?
এদিকে ১৮ মে বিকেলে কালকিনিতে অনুষ্ঠিত এই মিলনমেলা নিয়ে কালকিনির আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় দলীয় বিশৃঙ্খলাও সৃষ্টি হয়। ছিলো না কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রধান অংশ। পোস্টারে নাম থাকলেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না কালকিনিতে সর্ববৃহৎ অসংখ্য অনুষ্ঠানের আয়োজক ও সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ও এমপি সৈয়দ আবুল হোসেন। ছিলেন না তার সমর্থক আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। অনুষ্ঠানস্থল ছিল তুলনামূলকভাবে ফাঁকা। মাদারীপুর থেকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান অল্প সময়ের জন্য অনুষ্ঠানে যোগদান করে চলে আসেন। পুরো অনুষ্ঠানে ছিল না কোন প্রাণ। বিপুল সংখ্যক চেয়ার ছিল একেবারে খালি।
মাদারীপুরের রাজনৈতিক ও সচেতনমহলের একাধিক ব্যক্তি আক্ষেপ করে বলেন, বিগত বছরগুলোতে জেলা পরিষদের আয়োজনে জেলার মধ্যে সবচেয়ে বৃহৎ ও জাক-জমকপূর্ণ ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হলেও মিয়াজউদ্দিন খান প্রশাসক হিসেবে যোগ দেয়ার পর থেকে কোনো ইফতার মাহফিলেরও আয়োজন করা হয়নি, বঞ্চিত হয়েছে মাদারীপুরের মানুষ।
অপরদিকে মিলন মেলায় মানুষের সমাগম না থাকায় কালকিনিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। উপরমহলের আশীর্বাদে জেলা পরিষদের মত প্রতিষ্ঠানের অনির্বাচিত প্রশাসক হওয়ার আগে মাদারীপুরেতো নয়ই, কালকিনিতেও তার পরিচিতির গন্ডি ছিল সীমাবদ্ধ। আর তার জনসম্পৃক্তার দৈন্য ফুটে উঠেছে এবারের জেলা পরিষদের আয়োজনের মিলন মেলা’য়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যে মতবিরোধ থাকা সকল নেতা-কর্মীদের একত্রিত করে মিলন মেলায় সভাপতিত্ব করে নিজেকে সবার উর্ধ্বে জাহির করতে চেয়েছিলেন, সেই ইমেজ থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন জেলা পরিষদের প্রশাসক মিয়াজউদ্দিন খান। তিনি এ ধরণের মিলন মেলার আয়োজন করে জেলা পরিষদের তহবিলের টাকা খরচের বিষয়েও সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।